বাংলাদেশের কোনো ব্যাংকে যদি ১ কোটি ডিপোজিট করেন তাহলে মাসে কত টাকা লাভ পাবেন
Posted on: 2022-01-30 22:38:44
| Posted by: eibbuy.com
বাংলাদেশে বর্তমানে ঝুঁকিমুক্ত সুদের হার আছে ৭.১৭৫%। অর্থাৎ আপনি এক কোটি টাকা গভর্নমেন্ট ট্রেজারি বন্ডে ইনভেস্ট করলে আপনি মাসে মাসে ৫৯৭৯১ টাকা পাবেন এবং সেটা আপনি কোনোরকম ঝুঁকি না নিয়েই পাচ্ছেন। অবশ্য ব্যাংক অল্পকিছু টাকা ফি হিসেবে কেটে রাখতে পারে তবে সেটার পরিমাণ হবে খুবই কম।
এখন আপনাকে কোনো ফান্ড ম্যানেজার কিংবা কোনো ট্রেডার যদি কোনধরনের ইনভেস্টমেন্ট অফার করে, আপনার উচিৎ হবে হিসেব করে দেখা আপনি প্রতি মাসে ৫৯৭৯১ টাকা থেকে কত টাকা বেশি পাচ্ছেন ওই অফারটা থেকে। কারণ ইনভেস্টমেন্টে ঝুঁকি থাকে। আর যেকোনো ঝুঁকি নেয়ার একটা মূল্য থাকে। অর্থাৎ আপনি যে ঝুঁকিটা নিচ্ছেন সেটার জন্য আপনাকে ফান্ড ম্যানেজার কিংবা ট্রেডারের কাছ থেকে অতিরিক্ত একটা টাকা পেতে হবে। আপনি একটা ঝুঁকিপূর্ণ ইনভেস্টমেন্ট থেকে যেটা পাবেন সেটা ঝুঁকিবিহীন সুদের হার থেকে যত বেশি পাবেন, সেই বেশি এমাউন্টকে বলা হয় রিস্ক প্রিমিয়াম। এখন ধরেন কোনো একটা ট্রেডার মাসে ৮০০০০ টাকা অফার করলো ইনভেস্টমেন্ট করার জন্য। তাহলে আপনার আপনি যেই রিস্কটা নিচ্ছেন সেটার জন্য আপনি ৮০০০০-৫৯৭৯১=২০২০৯ টাকা রিস্ক প্রিমিয়াম অর্থাৎ ঝুঁকির নেয়ার পুরষ্কার হিসেবে পাবেন।
এখন কোনো ট্রেডার কিংবা ফান্ড ম্যানেজার যদি আপনাকে মাসে মাসে ৪০০০০ টাকা অফার করে তাহলে বুঝবেন সে আপনাকে ঝুঁকি নেয়ার জন্য কোনো রিস্ক প্রিমিয়াম (ঝুঁকির পুরষ্কার) তো অফার করলই না বরং আপনার যেটা প্রাপ্য সেটা থেকে সেটা থেকে সে মাসে মাসে ৫৯৭৯১-৪০০০০=১৯৭৯১ টাকা মেরে দেওয়ার ফন্দি-ফিকির করছে। তাছাড়া বাংলাদেশে তো ২০২১ সালে মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৫.৫৬%। তাহলে আপনাকে যদি কেউ এক কোটি টাকায় মাসে ৪০ হাজার টাকা (৪.৮% বছরে) অফার করে তাহলে আপনার তো লাভের পরিবর্তে শুধু মাত্র মুদ্রাস্ফীতির কারণে ৫.৫৬%-৪.৮%=০.৭৬%, অর্থাৎ {(১০০০০০০০x০.৭৬%)/১২}=৬৩৩৩ টাকা প্রতি মাসে লস হচ্ছে।
এতক্ষন আমি যেটা বললাম সেটা যদি আপনি বুঝে থাকেন তাহলে চলেন আরেকটু গভীরে যাই। প্রত্যেকটা দেশে একটা বেঞ্চমার্ক রিটার্ন বা মার্কেট রিটার্ন থাকে। এই বেঞ্চমার্ক রিটার্নটাকে তুলনা করার জন্য বেবহার করা হয়। বেঞ্চমার্ক রিটার্ন আসে ওই দেশের স্টকমার্কেটের ইনডেক্সের রিটার্ন থেকে। একজন পোর্টফোলিও ম্যানেজার কিংবা ট্রেডারের কৃতিত্ব তখনি থাকে যখন সে ওই বেঞ্চমার্ক রিটার্নের চেয়ে বেশি রিটার্ন আপনাকে দিতে পারে। এর কারণ হচ্ছে পোর্টফোলিও ম্যানেজার কিংবা ট্রেডার কখনোই মার্কেট রিস্কের চেয়ে কম রিস্কে কোনো ইনভেস্টমেন্ট অফার করতে পারে না।
যেহেতু আপনি তার কাছে গিয়ে মার্কেট রিস্ক বা ইনডেক্স রিস্কের চেয়ে বেশি রিস্ক নিচ্ছেন সেহেতু, আপনার রিটার্নটাও মার্কেট রিটার্নের চেয়ে বেশি হাওয়া উচিত। তার চেয়ে কম পেলে এখানে ট্রেডার কিংবা পোর্টফোলিও ম্যানেজারের কোনো কৃতিত্ব নাই কারণ আপনি নিজেই যেকোনো একটি ব্যাংকে কিংবা ব্রোকারেজ হাউসে গিয়ে চোখ বন্ধ করে এবং কোনো কিছু চিন্তা না করে বেঞ্চমার্ক স্টক ইনডেক্সে ইনভেস্ট করে এর চেয়ে বেশি রিটার্ন পাচ্ছেন। বেঞ্চমার্ক রিটার্নের চেয়ে কম রিটার্ন কোনো পোর্টফোলিও ম্যানেজার আপনাকে দিলে মনে করবেন সেই পোর্টফোলিও ম্যানেজার আপনাকে ঠকাচ্ছে।
উধাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশে গত বছর মার্কেট রিটার্ন ছিল ৫১.৩১% (সূত্র: ফাইনান্সিয়াল এক্সপ্রেস)। যেহেতু কোনো পোর্টফোলিও ম্যানেজার কিংবা ট্রেডার মার্কেট রিস্কের চেয়ে কম রিস্কে কোনো ইনভেস্টমেন্ট কখনোই অফার করতে পারে না, সেহেতু কোনো পোর্টফোলিও ম্যানেজার কিংবা ট্রেডার যদি আপনাকে ওই বছর ৫১.৩১% এর নিচে রিটার্ন দিয়ে থাকে, ধরে নিতে পারেন হয় সেই পোর্টফোলিও ম্যানেজার কিংবা ট্রেডার আপনাকে ঠকাইছে অথবা সে ছিল একটা গর্ধব। তাই কোনো পোর্টফোলিও ম্যানেজার কিংবা ট্রেডারের কাছে যাওয়ার আগে আপনার জানা উচিত বর্তমান মার্কেট রিটার্ন কত আছে, এবং পোর্টফোলিও ম্যানেজার কিংবা ট্রেডারের কাছে গিয়ে সেই রিটার্নের চেয়ে বেশি দাবি করা, যেহেতু আপনি তাদের কাছে যাওয়ার মাদ্ধমে মার্কেট রিস্কের চেয়ে বেশি রিস্ক নিচ্ছেন।
তারা সেটা না দিতে পারলে আপনি যেকোনো একটা ব্রোকারেজ হাউসে একাউন্ট খুলে ইনডেক্সে ইনভেস্ট করুন। আর যদি আপনি একেবারেই কোনো রিস্ক নিতে না চান (মানে শূন্য ঝুঁকি), সেক্ষেত্রে আপনার উচিত হবে গভর্নমেন্ট ট্রেজারি বন্ড কিনে ফেলে রাখা, তাহলে আপনি ৭.১৭৫% রিটার্ন পাবেন। অর্থাৎ এক কোটি টাকায় মাসে মাসে ৫৯৭৯১ টাকা কোনো ধরণের ঝুঁকি না নিয়েই পাবেন। পোস্ট অফিসের ও বিভিন্ন বন্ড আছে যেগুলোতে আরো বেশি সুদ পাওয়া যায় তবে সেখানে ইনভেস্টমেন্টের একটা নির্দিষ্ট লিমিট আছে। আপনার পরিবারে একাধিক প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ থাকলে তাদের নামেও বন্ড কিনতে পারেন। তাহলে ইনভেস্টমেন্ট লিমিট আপনাকে কোনো এফেক্ট করবে না।